'শবর' এক চির বঞ্চিত, অবহেলিত,শোষিত সম্প্রদায়ের নাম। - BANDHU বন্ধু

মানুষের পাশে থাকার ক্ষুদ্র প্রয়াস.....

Breaking

২৯ এপ্রিল ২০২০

'শবর' এক চির বঞ্চিত, অবহেলিত,শোষিত সম্প্রদায়ের নাম।

শবর এক চির বঞ্চিত, অবহেলিত,শোষিত সম্প্রদায়ের নাম। আসুন জেনে নিন সত্যটা !

এক সময় শবর জাতির মানুষেরা সমাজের সভ্য মানুষদের সাথে বসবাস করতো। তারা অন্য সম্প্রদায়ের মতোই বিভিন্ন জীবিকা নির্বাহ করে নিজেদের জীবন যাপন করতো। কিন্তু জীবনের নির্মম পরিহাসে তাদের অভাব ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। তার প্রধান কারণ ছিল তারা নিরক্ষর। আর এই নিরক্ষরতাকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা তুলতো কিছু স্বার্থপর লোভী মানুষ। তাদের শ্রমের প্রাপ্যটুকুও তারা পেতো না।
পরবর্তী কালে তাদের অভাব অনটনের চেয়ে পুলিশ প্রশাসনের ভয় তাদের জীবনকে আরো গ্রাস করতে শুরু করলো। কোথাও চুরি, ডাকাতি, খুন যাই হোক না কেন, তার দোষ এসে পড়তো অভাবী শবর মানুষগুলোর উপর। সবাই মনে করতো শবর দের অনেক অভাব, তাই তারাই সব অপরাধ মূলক কাজ গুলো করে, যতই সভ্য সমজের মানুষ অপরাধ করতো ততই তাদের উপর অত্যাচার করা হতো। তাসত্ত্বেও তারা সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করতো, কারণ তাদের আদালতে যাওয়ার মতো সামর্থ্য নেই, কাউকে বলার মতো পেটে শিক্ষা নেই।

এর পর আস্তে আস্তে যখন অত্যাচারের মাত্রা অতিক্রম করে যাচ্ছিল তখন তারা জীবনের ভয়ে গভীর জঙ্গলের মধ্যে বসবাস করতে শুরু করলো। যাতে কেউ তাদের খুজে না পায়। আর এভাবেই শুরু হয়েছিল তাদের অন্ধকার জগতের সূচনা।
জীবনের ভয়ে হয়তো গভীর জঙ্গলে এসে প্রানভরে বাঁচবার চেষ্টা করেছিল তারা, কিন্তু জঙ্গলের হাতি,শেয়াল,সাপ প্রভৃতি হিংস্র প্রানীর সাথে চলত সর্বদাই লড়াই। কাঠ,পাতা কুড়োতে গিয়ে মৃত্যু ঘটতো যখন তখন।
জঙ্গলে তাদের কাজ জুটতো না,ফলে রোজগার বন্ধ,তাই তাদের ভাত ডালও জুটতো না। বর্তমানে রাস্তা ঘাট আগের থেকে ভালো হলেও আগে কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। তারা পেটের খিদের জ্বালাতে গাছের ফল, পাতা খেয়ে বেচে থাকতে চেষ্ট করলো। হ্যাঁ, এই 2020 সালেও তারা আলুর মতো একপ্রকারের ফসল মাটি থেকে সংগ্রহ করে সিদ্ধ করে খায়। বেশিরভাগ মানুষ এই খাদ্য খেয়েই বেঁচে আছে অথচ যেখানে আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কত কত খাবার নষ্ট করি প্রতিনিয়ত।
যোগাযোগ না থাকার কারণে তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুব খারাপ ছিল। বর্তমানে কিছু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে চিকিৎসা পরিসেবা পাচ্ছে। কিন্তু তাদের শরীরের গঠনগুলো দেখলে মনে হয়, যেনো তারা প্রত্যেকেই কোনো এক অজানা কঠিন ব্যাধির স্বীকার। আসলে ব্যধিটা হল ক্ষুদা নামক মারণ ব্যধি। যারা দুবেলা পেট ভরে খেতে পায় না তাদের স্বাস্থ্য কেমন হবে তার ব্যাখ্যা করা অবান্তর।
শবর মানুষদের গায়ে দেওয়ার মতো জামা কাপড় নেই। কোথাও নগ্ন, কোথাও বা অর্ধ নগ্ন ভাবে তারা জীবন কাটাচ্ছে।
চাল হীন মাটির বাড়ি গুলোতে তাদের বসবাস, কেউ বাস করে ঝুপড়িতে,
কারো আবার বাড়িই নেই। সাথে সাপের কামড়, হাতির উৎপাত প্রচন্ড শীতে তারা কাঁপতে কাঁপতে সহ্য করতে না পেরে মৃত্যের মুখে ঢলে পড়ে। আর এভাবেই তাদের দুর্দশা চলে আসছে জীবনের পর জীবন। এই সভ্য সমাজের কেউ তাদের খোঁজ নেয় না ।
 স্বাস্থ্য আর শিক্ষার সাথে সম্পর্ক অনেকটা সমানুপাতিক। পেট ভর্তি থাকলে তো পড়াশুনোতে মন বসবে। আর পেটে যদি সারাক্ষণ ক্ষিদের জ্বালা খুঁড়ে খুঁড়ে খায়, তাহল কি শিক্ষা হবে? আর এভাবেই দিনের পর দিন তারা অযন্তে, অবহেলায়, অপুষ্টিতে বড় হয়ে উঠছে। কখনো ভেবে দেখেছেন হঠাৎ রাত্রিতে কোনো মায়ের প্রসব বেদনা হলে তাকে কোথায় নিয়ে যাবে? কিভাবেই বা নিয়ে যাবে? আমাদের ভাবার মতো সময়েই বা কোথাই?
বর্তমানে শবর মানুষদের অশিক্ষার ফলে তাদের সচেতনার খুব অভাব। তারা জানে না কিভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কিভাবে সন্তানকে মানুষ করতে হয়। জানেনা তারা ছেলে বা মেয়েদের বয়ঃসন্ধি কালিন সমস্যার কথা। জানবেই বা কি করে? কেউ তো তাদের জানানোর চেষ্টাও করে নি কোনোদিন।

সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, এই প্রত্যন্ত শবর গ্রামগুলির মানুষদের যতবেশি সম্ভব সচেতনতার আলো প্রসারিত করুন। তাদের কুসংস্কার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসুন, তাদের শিক্ষার মাধ্যমে নিজের প্রাপ্যটুকু পেতে সাহায্য করুন। আর শুধু সরকার নয়, আমাদেরকেও এই যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে থেকে তাদের নতুন আলোতে নিয়ে আসার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। প্রসারিত করতে হবে শিক্ষার আর সচেতনতা। তবেই এই পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে উঠবে।
লেখা এবং ছবি-   সন্দীপ কর্মকার (সদস্য)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন