'বন্ধু'
“ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসান রুটি।“
- কবি সুকান্তের বলা এই দুটি লাইন যেন বাস্তবের নাট্যমঞ্চে নাট্যস্থ হছে; এমনই মনে হবে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থেকে দক্ষিণে ২০-২৫ কিমি দূরে পাহাড় ঘেরা শবর আধিবাসিদের গ্রামগুলিতে গেলেই। সাধারনভাবে একজন মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ এরকম এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্য্যে ঘেরা পরিবেশে গেলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে বললে তা মোটেই বাহুল্য হবেনা। চারিদিকে সুউচ্চ পাহাড়শ্রেণী, সবুজের প্রাধান্য ও পাখিদের ঝাঁকের কলরব একজন প্রকৃতি প্রেমিককে মুগ্ধ করবেই। ইছে করবে পিকনিক করার, আনন্দ করার কিন্তু এই প্রকৃতির কোলে বসবাসকারী সেই প্রকৃতির সন্তানদের আনন্দ উপলব্ধি কতটুকু! আমরা কেউই তা ভাবতে চাইনা। বর্তমান দিনে যেখানে প্রত্যেকটি মানুষ নিজের ও পরিবারের স্বার্থে সফলতার চাবি হাসিল করার দৌড়ে নাম লিখিয়েছে সেখানে এই প্রশ্নটাই তো অযৌক্তিক। কিন্তু সত্যিই কি তাই! আমাদের জন্মের সার্থকতা কি শুধু এই নিজের সাফল্য ও পরিবারের সুখের মধ্যেই সীমিত?
কথাই আছে একটি প্রদীপের পাদদেশ সবসময় অন্ধকারেই থাকে। এরকম কয়েকটি অন্ধকারগ্রস্থ গ্রাম বুড়িঝোর, আমঝর্ণা ও পোপো কেটকি। প্রত্যেকটি গ্রামের গড় বাসিন্দা ১০০-১৫০ জন। প্রত্যেকটি পরিবারের লোকসংখ্যা গড়ে ৫-৭ জন অথচ রোজগার করেন মাত্র একজন। সেই রোজগারের টাকায় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা। শহরের ব্যস্থ জীবন থেকে অনেক দূরে তারা শুধুমাত্র একশ দিনের কাজের অপেক্ষায় বসে থাকে। এছাড়া, এক ফালি জমিতে আকাশের জলের ভরসায় চাষ করেও ২-৩ মাসের বেশি চলে না। গ্রীষ্মের দাব্দাহ থেকে বাঁচতে গাছের ছাউনি তাদের এক মাত্র আশ্রয়। বর্ষায় মাথা গোঁজার মত ঠাঁই তাদের নেই। চরম শীতে কাঠের আগুন তাদের একমাত্র ভরসা। এমনকি, শিশুদেরকেও একটুকরো গরম বস্ত্র কিনে দেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। গর্ভবতী মহিলারা পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চিন্তা করাটাকে বিলাসিতা মনে করে। সরকারি সাহায্যের হাত তাদের কাছে পৌছাতে পারেনা।
এমতাবস্থায় একবার ভেবে দেখুন এই মানুষগুলি জীবন-যুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই করবে না এই নৈসর্গিক আনন্দ উপভোগ করবে! এখানেই কবি সুকান্তের বলে যাওয়া কথাগুলি সত্য হয়ে ওঠে। আমরা ‘বন্ধু’-র সদস্যগণ সিধান্ত নিই যে আমরা আমাদের সামর্থ্য আনুযায়ী অন্ততপক্ষে একটা দিন এই মানুষগুলোকে আনন্দে কাটাতে সাহায্য করব। এরকম প্রাকৃতিক পরিবেশে পিকনিক একমাত্র উপলক্ষ্য যা সবাইকে একত্রিত করবে ও আনন্দ দেবে। তাই ঠিক হল, আমরা একটি পিকনিকের আয়োজন করব। এই ব্যাপার নিয়ে আমাদের প্রত্যেকটি সদস্য উৎসাহী হয় ও আয়োজনে উদ্যোগী হয়। গত ২৯শে নভেম্বের আমরা পৌঁছে যাই পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের একবারে প্রান্তিক এলাকা পোপো কেতকি গ্রামে। গ্রাম টি ছিল অসহায় আর অভুক্তের দেশ এর মতো। এই আয়োজনে আমরা পাশে পেয়েছিলাম বান্দোয়ানের শবর কমিটির দাদা দিদি দের, সাথে ঝাড়গ্রাম ও বান্দোয়ানের সমাজসেবী দাদাদের কে। এঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
প্রথমেই আমরা গ্রামের মানুষদের সাথে কথা বলি। ওঁদের নির্ভেজাল হাসি ও অকৃত্রিম আপ্যায়নে আভিভুত হয়ে পড়ি। পরিচিতি পর্ব শেষ হলে প্রাতরাশের ব্যাবস্থা করা হয়। শিশু থেকে বয়স্ক প্রত্যেকেই আনন্দের সাথে যোগ দেন আমাদের সাথে।
প্রাতরাশের পর ‘বন্ধু’-র পক্ষ থেকে শিশুদের নতুন গরম পোশাক ও খাতা-পেন-পেন্সিল উপহার দেওয়া হয়। মধ্যবয়স্ক পুরুস-মহিলাদের কিছু নতুন ও পুরাতন পোশাক দেওয়া হয়। বয়স্ক পুরুষ-মহিলাদের চাদর উপহার করায় তারা দু-হাত তুলে আশীর্বাদ করেন।
এরপর ছিল মধ্যাহ্ন ভোজনের আয়োজন। এক্ষেত্রেও প্রত্যেকেই স্বতঃস্ফুরতভাবে আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করেন। প্রত্যেকের মুখে তৃপ্তির ছবি পরিষ্কার দেখতে পেয়ে নিজেদের ধন্য মনে হল। এই ছবি দেখে মনে পড়ে গেল ঈশ্বরী পাটনি কেন মা অন্নপুর্নার কাছে অতি সধারন বরদান চেয়েছিলেন-‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। একজন মানুষ বিলাসিতার কথা পরে ভাবেন, তার আগে প্রয়োজন ক্ষুধা নিবৃত্তি করার।
কথাই আছে একটি প্রদীপের পাদদেশ সবসময় অন্ধকারেই থাকে। এরকম কয়েকটি অন্ধকারগ্রস্থ গ্রাম বুড়িঝোর, আমঝর্ণা ও পোপো কেটকি। প্রত্যেকটি গ্রামের গড় বাসিন্দা ১০০-১৫০ জন। প্রত্যেকটি পরিবারের লোকসংখ্যা গড়ে ৫-৭ জন অথচ রোজগার করেন মাত্র একজন। সেই রোজগারের টাকায় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা। শহরের ব্যস্থ জীবন থেকে অনেক দূরে তারা শুধুমাত্র একশ দিনের কাজের অপেক্ষায় বসে থাকে। এছাড়া, এক ফালি জমিতে আকাশের জলের ভরসায় চাষ করেও ২-৩ মাসের বেশি চলে না। গ্রীষ্মের দাব্দাহ থেকে বাঁচতে গাছের ছাউনি তাদের এক মাত্র আশ্রয়। বর্ষায় মাথা গোঁজার মত ঠাঁই তাদের নেই। চরম শীতে কাঠের আগুন তাদের একমাত্র ভরসা। এমনকি, শিশুদেরকেও একটুকরো গরম বস্ত্র কিনে দেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। গর্ভবতী মহিলারা পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চিন্তা করাটাকে বিলাসিতা মনে করে। সরকারি সাহায্যের হাত তাদের কাছে পৌছাতে পারেনা।
Villege's Child picture
এমতাবস্থায় একবার ভেবে দেখুন এই মানুষগুলি জীবন-যুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই করবে না এই নৈসর্গিক আনন্দ উপভোগ করবে! এখানেই কবি সুকান্তের বলে যাওয়া কথাগুলি সত্য হয়ে ওঠে। আমরা ‘বন্ধু’-র সদস্যগণ সিধান্ত নিই যে আমরা আমাদের সামর্থ্য আনুযায়ী অন্ততপক্ষে একটা দিন এই মানুষগুলোকে আনন্দে কাটাতে সাহায্য করব। এরকম প্রাকৃতিক পরিবেশে পিকনিক একমাত্র উপলক্ষ্য যা সবাইকে একত্রিত করবে ও আনন্দ দেবে। তাই ঠিক হল, আমরা একটি পিকনিকের আয়োজন করব। এই ব্যাপার নিয়ে আমাদের প্রত্যেকটি সদস্য উৎসাহী হয় ও আয়োজনে উদ্যোগী হয়। গত ২৯শে নভেম্বের আমরা পৌঁছে যাই পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের একবারে প্রান্তিক এলাকা পোপো কেতকি গ্রামে। গ্রাম টি ছিল অসহায় আর অভুক্তের দেশ এর মতো। এই আয়োজনে আমরা পাশে পেয়েছিলাম বান্দোয়ানের শবর কমিটির দাদা দিদি দের, সাথে ঝাড়গ্রাম ও বান্দোয়ানের সমাজসেবী দাদাদের কে। এঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
Tiffin Time Picture
প্রাতরাশের পর ‘বন্ধু’-র পক্ষ থেকে শিশুদের নতুন গরম পোশাক ও খাতা-পেন-পেন্সিল উপহার দেওয়া হয়। মধ্যবয়স্ক পুরুস-মহিলাদের কিছু নতুন ও পুরাতন পোশাক দেওয়া হয়। বয়স্ক পুরুষ-মহিলাদের চাদর উপহার করায় তারা দু-হাত তুলে আশীর্বাদ করেন।
Dress distribution pictures.
এরপর ছিল মধ্যাহ্ন ভোজনের আয়োজন। এক্ষেত্রেও প্রত্যেকেই স্বতঃস্ফুরতভাবে আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করেন। প্রত্যেকের মুখে তৃপ্তির ছবি পরিষ্কার দেখতে পেয়ে নিজেদের ধন্য মনে হল। এই ছবি দেখে মনে পড়ে গেল ঈশ্বরী পাটনি কেন মা অন্নপুর্নার কাছে অতি সধারন বরদান চেয়েছিলেন-‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। একজন মানুষ বিলাসিতার কথা পরে ভাবেন, তার আগে প্রয়োজন ক্ষুধা নিবৃত্তি করার।
Picture of Lunch time
পিকনিকের মতো বক্স-মাইকের ব্যাবস্থাও করা হয়েছিল ‘বন্ধু’-র পক্ষ থেকে। খওয়া-দাওয়ার পর সকলে মিলে নাচ-গানের মধ্যে দিয়ে এই ছোট্ট প্রচেষ্টাকে পূর্ণতা দেওয়া হল। ওই গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষের চোখে আনন্দ দেখে আমরাও খুশি হলাম।
Picture of Lunch time (2)
আগামীবার আরও বেশি সাহায্য ও আনন্দ উপহার দেওয়ার শপথ নিয়ে গ্রামবাসীদের কাছে বিদায় অনুমতি নেওয়া হল। এরকম ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা একদিন বৃহৎ হবে, আরও অনেক বন্ধুকে পাশে নিয়ে।
সেদিনের কিছু ছবি থাকলো আপনাদের জন্য।
সাথে থাকুন আপনিও। ধন্যবাদ
লেখা- জয়ন্ত হালদার (সদস্য)









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন